১ লাখ টাকায় ব্যবসা করার ১৩টি আইডিয়া

4/5 - (4 votes)

ছোটখাটো উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রয়োজন হয় সুদক্ষ চিন্তাভাবনা এবং সময়ানুবর্তিতা সহ পরিশ্রম। বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলো আপনি এক লাখ টাকার মধ্যে শুরু করতে পারেন। চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হলে আপনার মাধ্যমে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে যা আপনার জন্য ও লাভের কারণ হতে পারে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট রাখতে হবে যেন তাদের মাধ্যমে এক বা একাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়। এতে করে দেশের অর্থনীতি সচল থাকার পাশাপাশি তরুণরাও লাভবান হতে পারবে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জন্য ১ লাখ টাকায় ব্যবসা করার আইডিয়াগুলো তুলে ধরবো। যারা ইতোমধ্যে ব্যবসা শুরু করার চিন্তাভাবনা করছেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। 

১ লাখ টাকায় ব্যবসায়ের আইডিয়া 

সব ধরনের ব্যবসা করতে বড় অংকের পুঁজির প্রয়োজন হয় না। মাত্র এক লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে বেশ কিছু ভাল মনের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। চলুন এক নজরে দেখে আসি এক লাখ টাকার মধ্যে ব্যবসা গুলো কি কি হতে পারে।

অনলাইনে পোশাক ও অলংকার বিক্রির ব্যবসা

১ লাখ টাকায় ব্যবসা

মানুষই ইদানিং আধুনিক পোশাক এবং অলংকারের প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট হয়ে উঠছে। আপনি পাইকারি মার্কেট থেকে নিজের পছন্দ মত কিছু সুন্দর পোশাক এবং জুয়েলারি কিনে অনলাইনে একটি পেজ খুলে লাইভে এসে বা ছবি তুলে সেগুলো গ্রাহকের সামনে তুলে ধরে বিক্রি করতে পারেন। 

প্রথমত ১০-২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে আপনি এ ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। প্রথমদিকে খুব ছোট পরিসরে শুরু করে পরে মূলধন জোগাড় করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় করতে পারবেন।

অনলাইন নার্সারি এর ব্যবসা

বর্তমানে শহরের সৌখিন মানুষজন ঘরের সাজিয়ে রাখা যায় এমন গাছপালার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। আপনার যদি বাগান করার মতো ছোট পরিসরে কোন জায়গা থাকে তাহলে সেখানে ছোট নার্সারি তৈরি করুন। এবং ফেসবুকে একটি পেজ খুলে সেখানে আপনার গাছের সুন্দর কিছু ছবি আপলোড করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে আপনি গাছ বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার খুব সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

ফাস্টফুড এর দোকান

১ লাখ টাকায় ব্যবসা

মাত্র এক লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম মূলধন ব্যবহার করে আপনি ছোট পরিসরে ফাস্টফুডের দোকান দিতে পারবেন। স্টুডেন্ট বাজেটের ভেতর কিছু মুখরোচোক খাবার আপনি আপনার দোকানে সেল করতে পারেন। তবে এ ব্যবসা করার আগে অবশ্যই আপনার কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে। এবং কাঁচামাল সরবরাহের জন্য একটি সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে। ইদানিং যেহেতু ফাস্টফুডের দোকান একটু লাভজনক ব্যবসা তাই এখান থেকে আপনার সফল হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।

ক্যাটারিং সার্ভিস এর ব্যবসা

বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হলে ক্যাটারিং সার্ভিস এর সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। অফিস, আদালত ছাড়াও বিভিন্ন ইভেন্টে খাবার সার্ভিস প্রধানের মাধ্যমে আপনি ধীরে ধীরে আপনার ব্যবসা বড় করতে পারবেন। ক্যাটারিং সার্ভিস এর ব্যবসা শুরু করার জন্য এক লাখ টাকার কম পুঁজির প্রয়োজন হয়। 

এই ব্যবসা শুরু করার পূর্বে আপনাকে বড় সাইজের কিছু হাড়ি পাতিল এবং সুদক্ষ রাঁধুনি জোগাড় করতে হবে। আর সাথে থাকবে কাঁচামালের খরচ। ক্যাটারিং সার্ভিস এর মাধ্যমে আপনি পরিচিত অর্জন করতে পারলে  ব্যবসা খুব দ্রুত বড় করা সম্ভব।

চা-শিঙ্গাড়ার দোকান

আপনি জেনে অবাক হবেন মাত্র ৫০ হাজার টাকার মধ্যেই চা সিঙ্গারা দোকান এর ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। চা সিঙ্গারা বিক্রি করার জন্য খুব ছোট পরিসরে একটা দোকানের প্রয়োজন হবে যা ভাড়া নিতে বা ক্রয় করতে আপনার সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে ২০ হাজার টাকা। হাড়ি পাতিল এবং বাবুর্চির খরচ মিলিয়ে আরো ৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। 

বর্তমানে ছোট পরিসরে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে চা সিঙ্গারার দোকান অন্যতম। কারণ এখানে ১২ মাস ই ব্যবসার জমজমাট হয়ে ওঠে। যে কোন স্টুডেন্ট চাইলেও সামান্য পুঁজি নিয়ে চা সিঙ্গারার দোকান অবসর সময়ে চালাতে পারে।

ফলের জুসের স্টল

১ লাখ টাকায় ব্যবসা

মৌসুমী ভিত্তিক বিভিন্ন ফল জুস করে বিক্রি করতে পারলে বেশ লাভবান হওয়া যায়। তবে ফলের জুসের স্টল সাধারণত শহরাঞ্চলে বেশি চলে। শহরাঞ্চলে ফলের জুসের স্টল দেওয়ার জন্য আপনার ভাড়া লাগতে পারে ৪০-৭০ হাজার টাকা। 

তবে পজিশন আরো ভালো হলে খরচ আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং এই দোকানে আরো প্রয়োজন হয় ফ্রিজ, ব্লেন্ডার, উন্নত মানের গ্লাস, প্লেট, ট্রে ইত্যাদি। এগুলো বাবদ আপনার আরো খরচ হতে পারে ৩০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা। তবে এই পুঁজিতে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারলে বিশেষ করে গরম মৌসুমে খুব দ্রুত লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সার্ভিসিং সেন্টার 

বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এবং মোবাইল ফোন যেখানে মেরামত করা হয় তাকে সার্ভিসিং সেন্টার বলা হয়। আপনি যদি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস মেরামতের দক্ষ না হয়ে থাকেন তাহলে ছোট একটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনি সার্ভিসিং এ দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। প্রথমে ছোট পরিসরে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে সার্ভিসিং এর কাজ শুরু করতে পারেন। আপনার কাজ যখন গ্রাহকের কাছে পছন্দ হবে যখন ধীরে ধীরে আপনার কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার ব্যবসা ও বড় হবে।

মুদির দোকান

যাদের কাছে নগদ এক লক্ষ টাকা রয়েছে তারা অনায়াসে মুদি দোকান এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পজিশন অনুযায়ী একটা দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে প্রথমে কম পরিসরে কিছু মুদি মালামাল (চাল, ডাল, তেল, বিস্কুট, সাবান) ক্রয় করে বিক্রি শুরু করতে পারেন। 

পরবর্তীতে ব্যবসা বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনি আরো মালামাল ক্রয় করে আপনার দোকান বড় করতে পারেন এবং ব্যবসা এর পরিসর বাড়াতে পারেন। যেহেতু মুদি দোকানের ব্যবসা ১২ মাস থাকে তাই এটি নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক ব্যবসা।

জামা কাপড়ের ছোট দোকান

যে কোন মার্কেটে একটি ছোট্ট দোকান ভাড়া করে আপনি আপনার জামা কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার দোকান ভাড়া বাবদ খরচ হতে পারে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বাদবাকি টাকা দিয়ে পছন্দ অনুযায়ী পাইকারি দোকান থেকে কিছু জামাকাপড় কিনে বিক্রি করতে পারেন। 

আপনি চাইলে এই ব্যবসাটি অনলাইন ভিত্তিক পরিচালনা করতে পারেন আবার অফলাইনেও করতে পারেন। তবে যেভাবেই করুন না কেন বর্তমানে জামাকাপড়ের ব্যবসা বেশ লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে অন্যতম।

ছোটখাটো ফার্মেসি ব্যবসা

১ লাখ টাকায় ব্যবসা

ফার্মেসি ব্যবসা একটা লাভজনক ব্যবসা হলেও এখানে কয়েকটি শর্ত আপনাকে মেনে নিতে হবে। প্রথমে আপনাকে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। পরবর্তীতে ফর্ম ৭ পূরণ করতে হবে। ফর্ম ৭ যখন জমা দেবেন তখন এর সাথে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্রেজারি চালান, অন্য কোন ফার্মাসিস্ট দ্বারা অনুমতি পত্র, এবং আপনার কোর্স সমাপ্তির সার্টিফিকেট। 

যদি আপনি গ্রামাঞ্চলে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এক লক্ষ টাকার মধ্যে সম্ভব। কিন্তু শহরাঞ্চলে ফার্মেসি ব্যবসা এক লক্ষ টাকার পুজিতে করা সম্ভব নয়। তবে প্রথম দিকে কিছুটা পুঁজি নিয়ে আপনি ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করলে খুব দ্রুত এখানে উন্নতি করা সম্ভব। কারণ মানুষের অসুখ যতদিন থাকবে এবং যতদিন ঔষধ থাকবে ততদিন আপনার ব্যবসা বন্ধ হবে না।

দুধের সাপ্লাই ব্যবসা

বর্তমানে ভালো মানের গরুর দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনার আশেপাশে যদি উৎকৃষ্ট মানের দুধ কোথাও উৎপাদিত হয় তাহলে আপনি একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সেই দুধ সর্বস্তরের ডেলিভারি করতে পারেন অনলাইনের মাধ্যমে। তবে এই ব্যবসায়ের প্রধান শর্ত হলো খাঁটি এবং নির্ভেজাল দুধ সময়মতো গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পরবর্তীতে ব্যবসা বড় হওয়ার সাথে সাথে শুধুমাত্র দুধের পরিবর্তে মাখন, ঘি, পনির ইত্যাদি তৈরি করে ডেলিভারি করে ব্যবসায় বড় করতে পারেন।

ফুড ট্রাক ব্যবসা

১ লাখ টাকায় ব্যবসা

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হল ফুড ট্রাক ব্যবসা। ছোট একটি ফুড ট্রাক এর মাধ্যমে আপনি সেখানে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার তৈরি করে কাচা বাজার, শপিং মলের পাশে, মেলা, বুথ বা পপ-আপে বিক্রি করতে পারবেন। 

এই ব্যবসায়ের জন্য যে ফুড ট্রাক আপনি ক্রয় করবেন তার দাম পড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বাকি টাকায় কিছু হাড়ি পাতিল এবং কাঁচামাল ক্রয় করে আপনি ছোটপরিসারে ফুড ট্রাকের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। লোকসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে ফুড ট্রাকের ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে।

খাবার পানি সাপ্লাই এর ব্যবসা

বর্তমানের ২১ শতকের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে খাবার পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা অন্যতম। শহর হোক বা গ্রাম, অনেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি জোগাড় করতে পারে না। আপনার আশেপাশে যদি বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে খাবার পানি সাপ্লাই এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। 

এজন্য প্রথমেই আপনার একটি ছোট ভ্যান এবং কিছু বড় সাইজের পানির বোতলের প্রয়োজন হবে। যা ক্রয় করতে আপনার সর্বোচ্চ খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা। এই সামান্য পুজিতেই আপনি লাভজনক ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

📌 আরো পড়ুন 👇

১ লক্ষ টাকায় ব্যবসা সম্পর্কে আমাদের মতামত 

বর্তমানে চাকরির পেছনে ছুটে না বেরিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন। যারা ব্যবসা শুরু করে তারা প্রথমে ছোট পরিসর থেকেই শুরু করে। ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করার পর আপনি লাভবান হলে আপনা আপনি ব্যবসা বড় হতে থাকবে। 

আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেল এক লক্ষ টাকায় ব্যবসা পড়ে আপনারা কিছুটা হলেও ব্যবসায় সম্পর্কে আইডিয়া পেয়েছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম তথ্যমূলক আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

Sharing Is Caring

Leave a Comment