স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া (১০টি ব্যাবসার আইডিয়া)

5/5 - (1 vote)

ব্যবসা নিয়ে তরুন প্রজন্ম এখন স্বপ্ন দেখে। চাকরির পেছনে না দৌড়ে এখন অনেকেরই ব্যবসা পছন্দের তালিকায় প্রথম অবস্থান করছে। তবে প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত তরুণ প্রজন্ম ব্যবসার প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। ব্যবসা শুরু করার জন্য শুধুমাত্র আগ্রহ থাকলেই হয় না, বরং দরকার সুগঠিত পরিকল্পনা, ব্যবসার প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক ধারণা। ব্যবসার সকল প্রকার এই শুরু করা যায়, অথচ স্বল্প মূলধনী ব্যবসা এবং দীর্ঘ মূলধনী ব্যবসা।

আমরা আজকের আর্টিকেলে স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ স্মার্টলি হ্যান্ডেল করা যায় এমন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই ব্যবসা সম্পর্কে সুবিন্যস্ত ধারণা থাকতে হবে। ধারণার অভাবের কারণে পর্যাপ্ত পুঁজির থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ব্যবসায় উন্নতি করতে পারেন না। মূলত তাদের জন্য সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল।

স্মার্ট ব্যবসা কি

যেসব ব্যবসা শুরু করার জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না কিন্তু পুঁজি অনুযায়ী কম জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা করা যায় তাকে স্মার্ট ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। আরো সবিস্তারে বলতে গেলে, যে ব্যবসায় প্রযুক্তির সর্বতম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় এবং যেসব ব্যবসায়ের কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার সর্বোত্তম তাকেই স্মার্ট ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। নতুন বাজার খুঁজে বের করতে, দ্রুত ডেটা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, স্বয়ংক্রিয়করণ বা ডেটা বিশ্লেষনের মাধ্যমিক কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে স্মার্ট ব্যবসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে আমরা বিস্তারিতভাবে কয়েকটি স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করব।

১) টয় বা খেলনার শপ এর ব্যবসা 

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া

শিশুরা বলতেই খেলনার উপর আগ্রহী। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে খেলার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের বৈসাদৃশ্য এসেছে। বর্তমানে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের টেকনোলজি সমৃদ্ধ খেলার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। শহরাঞ্চলে এ ধরনের খেলার শোরুম প্রতিষ্ঠা করে অনায়াসে সারা বছর ব্যবসা করতে পারেন। প্রত্যেক ঋতুতেই এই খেলার সমান প্রচলন থাকে ফলে কোন একটি বিশেষ ঋতুতে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে খেলনার শপ সাজানোর সময় কিছুটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করবেন এতে করে শিশুরা খুব দ্রুত আকৃষ্ট হবে। আর আপনার দোকানের পণ্য সারি বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনলাইন সার্ভিস চালু করলে আরো বেশি লাভবান হবেন।

২) ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও তৈরি করা 

বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে ইউটিউব দেখার প্রতি সবাই বিশেষ আগ্রহী। আপনার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড ভিডিও করে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে পাবলিশ করতে পারেন। youtube চ্যানেলে ভিডিওর ক্ষেত্রে নিজস্ব স্বকীয়তা থাকা একান্ত প্রয়োজন। কারণ এখানে কোন ধরনের কপি ভিডিও গ্রহণ করা হয় না। কিছুদিন ভিডিও আপলোড করার পর মানুষ যখন আপনার ভিডিও দেখে আনন্দিত হবে তখন আপনার ভিউয়ার্স এর পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং সেখান থেকে আপনি ভালো অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন। যেসব বিষয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন তা হল: 

  • লাইফ হ্যাক
  • টিউটরিয়াল
  • নাচ
  • গান
  • সেলাই
  • বিভিন্ন তথ্যবহুল ভিডিও
  • মজার কিছু জিনিস
  • রান্নার ভিডিও
  • রিভিও
  • ট্রাভেল।

আরো পড়ুন: ভিডিও এডিটিং করে আয় করার উপায়

৩) ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা 

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া

ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই ফ্যাশন সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী। বর্তমানে ট্রেন্ডিং এ কোন পোশাক রয়েছে এবং তার সাথে কোন ডিজাইন যোগ করলে আপনার তৈরিকৃত পোশাকটি অন্যদের চেয়ে আলাদা হবে সে বিষয়ে ধারণা থাকলেই আপনি একজন ভালো ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সমাজে পরিচিতি পেতে পারেন। বর্তমানে অন্যতম লাভজনক ব্যবসা হল ফ্যাশন ডিজাইনের ব্যবসা। মানুষের রুচি এবং পছন্দের দিক বিবেচনা করে প্রথম দিকে অনলাইনে ব্যবসা করলে এবং পরে মুনাফার অর্থ জমিয়ে সেই টাকায় পরবর্তী তে শোরুম স্থাপন করে ব্যবসা বড় করা যায়।

৪) আইসক্রিম শপের ব্যবসা 

শীতের মৌসুমে জনসমাগম হয় এমন কোন জায়গায় আইসক্রিমের ব্যবসার শুরু করতে পারেন। ছোট একটি বা দুইটি ফ্রিজ কিনে সেখানে কয়েক রকমের আইসক্রিম বানিয়ে নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। অনেকেই মনে করেন আইসক্রিমের ব্যবসায় একটি ছোট ব্যবসা। কিন্তু আজকের ব্যবসা খুবই লাভজনক এবং কিছুদিনের মধ্যেই আপনি ব্যাপক মুনাফা তৈরি করতে পারবেন এই শপ থেকে।

কিন্তু মনে রাখবেন, আইসক্রিমের দোকান যদি পজিশন মত তৈরি করা না যায় সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে। এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে জনসমাগম হয় এমন এলাকা বা স্কুল কলেজের পাশে আজ থেকে দোকান দিলে ভালো লাভবান হতে পারবে।

৫) ফাস্ট ফুড শপের ব্যবসা 

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া

ফাস্টফুড এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই। বিকালের আড্ডাই হোক বা সন্ধ্যায় তরুণ তরুণীরা এখন মেতে ওঠে ফাস্টফুডের দোকানের আড্ডায়। তবে ফাস্টফুডের শপের ব্যবসা করার জন্য আপনাকে প্রথমে ফুড তৈরির একটি ছোট কোর্স করে দিতে হবে। তারপর পজিশন মত শপের সাহায্যে বা ফুড কোর্ট এর মাধ্যমেও ফুড শপের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। তবে শহরাঞ্চলে এখন ফাস্টফুড এর ব্যবসা খুবই জাঁকজমক হয় সেখানে খুব দ্রুত এই ব্যবসায় লাভবান হওয়া কঠিন।

তাই নিজস্ব পাড়া বা মহল্লার মোড়ে ফাস্টফুডের ব্যবসা করলে বেশ তাড়াতাড়ি মুনাফা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। আপনি চাইলে বাসায় ফাস্টফুড তৈরি করে অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। যেহেতু এই কাজটি অনলাইনে মাধ্যমে করা যায় তাই এটি একটি স্মার্ট ব্যবসা।

৬) ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যবসা 

অনলাইনের এই যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার আইডিয়া বের হচ্ছে। অনলাইনে সকল ধরনের পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ডেলিভারি সার্ভিসের। ডেলিভারি সার্ভিস যদি খারাপ হয় সেক্ষেত্রে ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ে থাকে। তাই আপনি চাইলে কিছু লোকবল সংগ্রহ করে ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যবসা করার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হয় সাহসের এবং সৎ উদ্যোগের। গ্রাহকের পণ্য সঠিক সময়ে তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন এবং এতে করে ব্যবসা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। যেহেতু কাজটি সম্পূর্নরূপে অনলাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে তাই এটি একটি স্মার্ট ব্যবসা।

৭) ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির ব্যবসা 

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া

ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটির সাথে এখন কম বেশি সবাই পরিচিত। SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং কনটেন্ট ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা থাকলে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির ব্যবসা শুরু করা যায়। এই ব্যবসাটি করার জন্য খুব বেশি জায়গা বা মুনাফার প্রয়োজন হয় না। তবে এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সর্বপ্রথম অবস্থায় আপনার নিজের ব্যবসার মার্কেটিং নিজেকেই করতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে আপনি কতটুকু দক্ষ তা প্রথমে গ্রাহকদের জানাতে হবে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির সেবা প্রদান করতে হবে। আপনার এজেন্সি যখন মোটামুটি মানুষের কাছে পরিচিত হবে তখন আপনি আপনার এজেন্সি থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেহেতু এটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক একটি কাজ, সেহেতু এটি একটি স্মার্ট ব্যবসায়ের আওতায় পড়ে।

৮) শিক্ষামূলক কোর্স বা টিউটরিং করে ব্যবসা 

অনেক আগে থেকেই বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশন করা ছাত্রদের অন্যতম একটি পেশা। কিন্তু বর্তমানে এই পেশায় কিছুটা ভিন্নতা ঘটিয়ে শিক্ষামূলক কোর্স বা টিউটরিং এর মাধ্যমে ব্যবসা করা যাচ্ছে। আপনি যদি পড়াশোনা বা অন্য কোনো কারিকুলামে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে আপনার নিজের মেধা সেখানে ধীরে ধীরে তুলে ধরতে পারেন। 

যখন আপনার পেইজে ফ্যান ফলোয়ার বৃদ্ধি পাবে তখন সেখানে টিউশন সেন্টার খুলে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিয়ে বেশ ভালো অংকের টাকা ইনকাম করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে আপনি তখন ই উন্নতি করতে পারবেন যখন আপনার বোঝানোর ক্ষমতা ভালো থাকবে। আপনি যদি কোন বিষয়ে দক্ষ হন তাহলে এখন থেকে এই কাজটি শুরু করতে পারেন এতে করে মাসে বেশ ভালো অংকের টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

৯) ইলেকট্রনিক্স শপ খুলে স্মার্ট ব্যবসা 

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া

আধুনিক ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যমূল্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অল্প পুঁজিতে এবং কম সময়ে বেশি মুনাফা অর্জন করার জন্য ইলেকট্রনিক্স শপ এর ব্যবসা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। গ্রাম হোক বা শহর, যেকোনো জায়গায় প্রতিনিয়ত ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যমূল্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী গ্রামে অথবা শহরে যে কোন জায়গায় সুবিধা মত ইলেকট্রনিক্স শপ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আপনার এলাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন ধরনের ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যাদি দোকানে রেখে ব্যবসা শুরু করতে পারেন পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় করতে পারবেন।

১০) ই-কমার্স স্টোরস এর ব্যবসা

আপনার যদি কোন পণ্য বানানোর দক্ষতা থাকে তাহলে সেই পণ্য বানিয়েই এই ই-কমার্স সাইট এর মাধ্যমে নিজেই বিক্রি করতে পারেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ধরনের ব্যবসা গুলো বেশ জনপ্রিয়। ইলেকট্রনিক্স আইটেম ,জামা কাপড়, প্যান্ট, কাস্টমাইজড মগ, কাস্টমাইজ টি শার্ট ইত্যাদি যে কোন পণ্য ই-কমার্স স্টোরস এর মাধ্যমে বিক্রি করা সম্ভব। এছাড়া অনলাইনে ই কমার্স স্টোরস খুলে খুবই লাভজনক ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এই ব্যবসা। তবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং ডিজিটাল উপায়ে ব্যবসা শুরু করে সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

📌 আরো পড়ুন 👇

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে আমাদের মতামত

অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য মানুষ এখন সচরাচর স্মার্ট ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জন্য স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তবে যেকোনো ধরনের স্মার্ট ব্যবসা শুরু করার পূর্বে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করুন এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এরকম তথ্যমূলক আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি জুড়ে আপনাকে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring

Leave a Comment