মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা – মোবাইল ফোন বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি টেকনোলজি। ২০২১ সালের একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে দেখা যায় সারাবিশ্বে প্রায় ৭,১ বিলিয়ন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। অর্থ্যাত প্রায় পুরো বিশ্ব মোবাইল ফোনের আওতাভুক্ত রয়েছে। এর সবচেয়ে বড় একটি কারণ হলো মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা ও মোবাইল ফোনের সুবিধা।
বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। আমরা দিন দিন প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছি ফলে প্রযুক্তি আমাদের কাছে সব কিছু হতে চলেছে। চিন্তা করুন তো মোবাইল ছাড়া কি আপনি দিন অতিবাহিত করতে পারবেন? হয়ত পারবেন তবে মোবাইল ফোন না থাকার বিষয় টা আপনাকে পীড়া দিতে শুরু করবে। আর এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের অপকারিতার দিক গুলো।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে। যেখানে আমরা আলোচনা করব মোবাইল কেন আপনার ব্যবহার করা উচিত, কিভাবে ব্যবহার করলে আপনি মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক গুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। তো আপনি যদি এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাহলে আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।
মোবাইল ফোনের উপকারিতা
সর্বপ্রথম আমরা মোবাইল ফোনের উপকারিতা দিয়ে শুরু করতে পারি। যেহেতু বিশ্বে মোবাইল ফোন ছাড়া একেবারে অচল হয়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রথমে মোবাইল আবিস্কার করা হলেও বর্তমানে শুধু মাত্র যোগাযোগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমানে মানুষ। মোবাইল ফোনের অনেক উপকারিতার দিক রয়েছে যা সব গুলো তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। প্রধান কয়েকটি উপকারিতার দিক গুলো আমরা নিচে তুলে ধরলাম –
১. যোগাযোগ এর অন্যতম মাধ্যম

মোবাইলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায় যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে। যদি আমরা মোবাইল আবিস্কার এর সময়কাল সম্পর্কে একটু ঘাটি তাহলে দেখতে পাবো, মোবাইল ফোন আবিস্কার এর প্রধান কারণ ছিল দূর দূরান্তে নেটওয়ার্ক রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করা। তবে ডিজিটাল এই যুগে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। যেখানে ব্যবহারকারী রিয়্যেল টাইম ভিডিও কলের ফিচার উপভোগ করতে পারে।
২. ইন্টারনেট ব্যবহার
মোবাইল ফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ইন্টারনেট। বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া সব কিছুই অচল হয়ে পরে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে কোনো স্থানে বসে ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকা যায়। ছোট ডিভাইস হওয়ায় বিশ্বে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সাধারণত মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, বিনোদন, তথ্য অনুসন্ধান এর কাজে ব্যবহুত হয়।
৩. জিপিএস ও ম্যাপ
মনে করুন আপনাকে গুলসান ১২ নম্বর সেক্টরে একটি বাসায় যেতে হবে কিন্তু আপনি ঢাকা শহড় এই চিনেন না গুলসান তো আরো পরের কথা। এ ক্ষেত্রে আপনাকে মানুষ কে জিজ্ঞেস করে করে যেতে হবে। একদিকে এটা যেমন সময় সাপেক্ষ অন্যদিকে ঝামেলার ব্যাপার ও বটে।
তবে আপনার কাছে যদি ইন্টারনেট সংযুক্ত কোনো স্মার্টফোন থাকে তাহলে জিপিএস সিস্টেম ও গুগল ম্যাপস ব্যবহার করে আপনার লোকেসন দেখতে পারবেন। পাশাপাশি আপনি অচেনা যে স্থানে যেতে চাচ্ছেন সেখানে সিলেক্ট করে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।
৪. শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইলের উপকারিতা

আধুনিক যুগের পাশাপাশি আপনাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ও হয়েছে অনেক বড় পরিবর্তন। বর্তমানে মোবাইল ফোন দিয়ে যে কোনো বিষয়ের সমস্যার সমাধান খুজে পাওয়া যায়। মনে করুন – আপনি একটি অংক বার বার চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারছেন না, হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে সার্চ করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান পেয়ে যাবেন।
এ ছাড়াও যে কোনো ধরণের তথ্য, ইতিহাস ইত্যাদি উইকিপেডিয়া থেকে জেনে নেয়া সম্ভব। এসাইনমেন্ট সম্পর্কিত অনেক ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। বলা যায় বর্তমান পড়ালেখার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন অত্যাবশকিয়।
৫. বিনোদন এর মাধ্যম
ইন্টারনেটে প্রচুর পরিমানে সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্লাটফর্ম রয়েছে। যেখান থেকে যে কোনো বয়সের মানুষ বাসায় বসে তার মোবাইল থেকেই বিনোদন এর খোরাক পূরণ করতে পারেন। বিশেষ করে – ইউটিউব বা ফেসবুকে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও কন্টেন্ট আছে।
এ ছাড়াও আপনার মুভি দেখার জন্য কোনো সিনেমা হলে যেতে হবে না। মোবাইলে নেটফ্লিক্স ও ওটিটি প্লাটফর্ম দিয়ে যেখানে সেখানে বসেই বানিয়ে নিতে পারবেন মুভি থিয়েটার। এ ছাড়াও মোবাইলে রয়েছে অসংখ্য গেমস যা খেলে অনায়াসে সময় পার করা যায়।
৬. ভিডিও ও ক্যামেরা
আপনার কাছে একটি মোবাইল থাকলে আলাদা করে আপনাকে আর কোনো ক্যামেরা ক্রয় করতে হবে না। কারণ ভালো মোবাইল গুলোতে উন্নত মানের ক্যামেরা দেয়া থাকে। যা দিয়ে আপনি সাধারণ ভাবে ফটোগ্রাফি ও ভিডিও গ্রাফির কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
৭. মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনাকে মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং যেমন নগদ, বিকাশ ইত্যাদি ব্যবহার করে জরুরি মুহুর্তে টাকা লেনদেন করা। মোবাইল ব্যবহার করলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করার বাড়তি সুবিধা ভোগ করা যায়।
৮. সোশ্যাল প্লাটফর্ম

মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই যে কোনো স্থান থেকে সাধারণ কাজ যেমন ইমেইল পাঠানো, ডকুমেন্টস পড়া ও এডিট করা যায়। যাত্রাপথে চাইলে মোবাইল বের করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সবার সাথে কানেক্টেড থাকা যায়। এ ছাড়াও সবচেয়ে উপকারি একটি দিক হলো বিপদের সম্মুখিন হলে কাছের মানুষের সাহায্য চাওয়া যায়।
৯. অনলাইনে শপিং
মোবাইল ব্যবহার করে আপনি চাইলেই বিভিন্ন অনলাইনে স্টোর থেকে যে কোনো কিছুই ক্রয় করতে পারবেন। এ ছাড়াও কোথাও ট্রাভেল করার ক্ষেত্রে আপনি সহজেই ট্রাস্নপোর্ট টিকেট ক্রয় করতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে – মোবাইল বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনিয় একটি ডিভাইস আমাদের জন্য। আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের জীবন কে আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ করতে পেরেছি শুধুমাত্র মোবাইলের মাধ্যমে। টাইম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই মোবাইলের ভুমিকা লক্ষ্য করা যায়।
📌 আরো পড়ুন 👇
কিন্তু এত উপকারিতার মাঝেও মোবাইল ফোনের রয়েছে ভয়ংকর কিছু দিক। সেটা যদি আপনি না জানেন পরতে পারেন অনেক বড় বিপদে। নিচে আমরা মোবাইলের ফোনের বিশেষ কয়েকটি অপকারিতার দিক উল্লেখ্য করে দিচ্ছি –
মোবাইল ফোনের অপকারিতা
উপকারিতা যেখানে থাকে অপকারিতা সেখানে থাকবে এটা স্বভাবিক একটা বিষয়। তবে অপকারিতার দিক গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা এগুলো সহজেই প্রতিহত করতে পারি। মোবাইল ফোনের কয়েকটি অপকারিতা হলো –
১. মোবাইল আসক্তি

দীর্ঘসময় মোবাইলের ব্যবহার করার ফলে আসক্তি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর মোবাইলে আসক্তি চলে আসলে এটা আপনার মানুষিক ও শারিরিক ক্ষতি করতে পারে। টাইম ম্যানেমেন্ট এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় চলে যায় মোবাইল ফোনে যার ফলে সময় অপচয় রোধ করা কঠিন হয়ে যায়। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন আসক্তি তৈরি না হয়।
২. স্বাস্থ্যের ক্ষতি
দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে মাথা ব্যাথা দেখা দেয়। যা আমাদের ব্রেইনের অনেক ক্ষতি করে। মোবাইল থেকে নির্গত আলোক রশ্নি চোখের ক্ষতি করে। যার ফলে দেখা যায় ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। সঠিক সময়ে ঘুম না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার।
এ ছাড়াও মোবাইলে থাকা রেডিয়েসন আমাদের মাথার ব্রেইন কে নষ্ট করে।
৩. সাইবার বুলিং

অনলাইনে যেহেতু কারো আইডেন্টি টি থাকে না তাই দিন দিন অনলাইনে হ্যারেসমেন্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েরা সাইবার বুলিং এর স্বিকার হয় সবচেয়ে বেশি।
৪. প্রাইভেসি থাকে না
অনলাইনে একধদরণের বিশেষ চক্র রয়েছে যারা ক্ষতি করতে পারে। সাধারণত তাদের হ্যাকার বলা হয়। যদি সঠিক ভাবে সতর্ক না থাকা যায় তবে হ্যাক এর মাধ্যমে আপনার ব্যাক্তিগত সব তথ্য অন্যের কাছে চলে যাবে।
৫. অতিরিক্ত মূল্য

মোবাইলে বিভিন্ন প্যাকেজ ক্রয় করলেই কেবল আপনি ইন্টারনেট একসেস করতে পারবেন। যেগুলোর দাম অনেক বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষে সেটা বহন করা সম্বব না।
মোবাইলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের মতামত
মোবাইলের উপকারিতা ও অপকারিতা – আর্টিকেলে আমরা মোবাইলের উপকারি দিক ও ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করলাম। মোবাইলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা দ্রুত উত্তর দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ