বর্তমান সময়ে খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষ জীবন যাত্রার মান সহজ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল যন্ত্রপাতি আবিস্কার করেছে। আমাদের ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার এলার্ম থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমরা প্রযুক্তির উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল।
প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তি আবিস্কার করেছে। তবে প্রাচীন কালে আধুনিক বা ডিজিটাল প্রযুক্তি আবিস্কার করা সম্ভব ছিল না। মূলত ডিজিটাল প্রযুক্তি গুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করতে সক্ষম হয়।
আমাদের আজকের পোস্টে আমরা জানবো ডিজিটাল প্রযুক্তি কি, ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল সুবিধা অসুবিধা ও কিভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করেছে সব কিছুই থাকছে আজকের আর্টিকেলে। তাই আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।
ডিজিটাল প্রযুক্তি কি
ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পূর্বে আমাদের জানা দরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি মূলত কি। সাধারণত ডিজিটাল প্রযুক্তি বলা হয় সেসব প্রযুক্তি কে যা বাইনারি সংখ্যার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এমন ধরণের ইলেক্ট্রনিক টুলস, ডিভাইস বা সিস্টেম যা মুলত ০ ও ১ এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এখানে ০ এবং ১ হলো বাইনারি সংখ্যা।
সাধারণত এনালগ প্রযুক্তির চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা দিতে পারে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার মান সম্পূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় – কল্পনা করুন এমন একটি ফোন যা দিয়ে আপনি শুধুই কল করতে পারবেন। আর কোনো ফিচার যেমন – গেমস, ভিডিও স্ট্রিম কিছুই করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রযুক্তি আপনার জীবন কে কিছুটা সহজ করলেও পুরোটা করতে সক্ষম নয়।
অন্যদিকে ভাবুন আমরা একটি স্মার্টফোন দিয়ে দৈনন্দিন জীবনে কত ভাবে সুবিধা নিচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট সেবা ইত্যাদি আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ঠিক এভাবেই দিন দিন ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবন যাত্রার মান কে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ১০টি ব্যবহার
ডিজিটাল প্রযুক্তি আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি। আপনি যদি এই আর্টিকেল টি পড়ে থাকেন তবে আপনি নিজেও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারনে আর্টিকেল টি পড়তে পারছেন। নিচে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির কয়েকটি ব্যবহার সম্পর্কে জানালাম –
১. যোগাযোগ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বর্তমানে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির উপরে নির্ভরশীল। ভিডিও কনফারেন্স অথবা অনলাইনে ক্লাসের জন্য -যুম, মাইক্রোসফট টিমস, গুগল মিট ইত্যাদি ব্যবহার করি।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি যোগাযোগ করা খুবই সহজ। যেমন – ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসপ ইত্যাদি।
২. শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল বলা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের কোর্স পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিযোগীতায় যে কোনো দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে অংশগ্রহণ করতে পারে।
আরো পড়ুন: শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার
৩. স্বাস্থ্যসেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
টেলিমেডিসিন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরণের অপারেসন এর ক্ষেত্রেও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। রোগীদের বিভিন্ন ধরনের সেবার ক্ষেত্রে অনেক ধরণের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
৪. ব্যবসাক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
ব্যবসা ক্ষেত্রে অনেক বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনলাইনে মানুষ তাদের প্রোডাক্ট এর প্রচারণা করতে পারছে।
আরো পড়ুন: ঘরে বসে ক্ষুদ্র ব্যবসার ১৫টি সেরা আইডিয়া
৫. বিনোদনক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
বিনোদনের অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি মাধ্যম হলো বর্তমানে অনলাইন। অনলাইনের মাধ্যমে মুভি দেখা যায়, গেমস খেলা যায়, ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করা যায়।
৬. সরকারি ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
সরকারি বিভিন্ন সেক্টর গুলোতে বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবা প্রদান করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ভোট সিস্টেম ও ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে কর প্রদান করা যায়, সরকার ডিজিটাল সিটিজেন সেবা দিতে সক্ষম। নাগরিকের সকল তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়।
৭. কৃষি ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ভূমিকা অনেক। বর্তমানে উন্নত সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের এনালাইসাইস এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
৮. পরিবেশ রক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
পরিবেশের ভারসাম্য পরিমাপ এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরণের প্রকৃতিক বিপর্যয় এর আগাম সংকেত পেতে ডিজিটাল প্রযুক্তি বেশ ভালোভাবে কাজ করে। শক্তি বা জ্বালানি কে রিনিউ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরণের দূষন সম্পর্কে ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে মনিটরিং করা যায়। পরিবেশ রক্ষায় অনেক বেশি কম সময়ের মধ্যে সব কিছুই করা যায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
৯. ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমানে প্রায় সব ধরণের ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ব্যাংকিং সিস্টেম কে আরো বেশি সহজ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সকলের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ক্রিপ্টো কারেন্সি ও ব্লকচেইন এর মত বড় বড় উন্নত মানের সিকিউরিটি সেবা দিচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন অনেক বেশি নিরাপদ ও সহজ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কাকে বলে
১০. যাতায়াত ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
যাতায়াত ও ট্রান্সপোর্ট এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বর্তমানে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো স্থানে খুব সহজেই যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা রাস্তায় ট্রাফিক দেখি সেগুলো নিয়ন্ত্রণ এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার
ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আমাদের একদিন কল্পনা করাও বেশ কঠিন। ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। নিচে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা ও অসুবিধার দিক গুলো তুলে ধরলাম –
ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। নিম্নে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা গুলো বর্ণনা করা হলো:
- যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। যে কোনো মুহুর্তে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো স্থানে যোগাযোগ করা যায় সহজেই।
- বিনোদনের স্থান অনলাইনে হওয়ায় মানুষ যে কোনো স্থানে বসে মুভি দেখা বা যে কোনো ধরনের কন্টেন্ট দেখতে পারে।
- নতুন কাজের সুজোগ তৈরি হয়েছে। বাড়িতে বসে রিমোট জব করতে পারছে বিশ্বের যে কোনো দেশে।
- শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। অনলাইন ক্লাশ থেকে শুরু করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেসন এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ে পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
- ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে যে কোনো সময়ে যে কোনো তথ্য খুজে বের করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্যের জন্য অনেক অনেক বই খোজার চেয়ে ইন্টারনেটে কয়েকটি অনুসন্ধান আপনাকে সঠিক তথ্য টি উপস্থাপন করে দিবে।
- পরিবেশের ভারসাম্য পর্যবেক্ষন ও পৃথিবীতে আসা বিভিন্ন ধরণের প্রকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে আগাম বার্তা পাওয়া যায়। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে কমানো যাচ্ছে।
- ই-বুক সেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে কাগজ এর অপচয় অনেক কমেছে। যা আমাদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক একটি ব্যাপার।
- স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে বাড়ি কে স্মার্ট হোম হিসেবে তৈরি করা যাচ্ছে। যার মাধ্যমে বাসায় না থেকেও বাসার সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ ও চালু করার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
- ইন্টারনেটে প্রচুর পরিমানে তথ্য সংরক্ষন করে রাখার জন্য অনেক ক্লাউড স্টোরেজ রয়েছে। যা সকলের জন্য উন্মুক্ত।
ডিজিটাল প্রযুক্তির অসুবিধা
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিম্নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অসুবিধা গুলো বর্ণনা করা হলো:
- ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান একটি অসুবিধার দিক হলো এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে প্রাইভেসি নিরাপদ নয়। প্রযুক্তি গুলো ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়।
- অনলাইনে প্রচুর পরিমানে স্ক্যামার রয়েছে যা সাধারণ মানুষের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।
- অতিরিক্ত পরিমান ডিভাইস ব্যবহারের ফলে মানুষিক বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে – ডিপ্রেসন, এঞ্জাইটি, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা ইত্যাদি।
- মানুষের মাঝে সামনা সামনি আলাপচারিতা বিলুপ্ত হচ্ছে।
- বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া থাকার কারনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
- সাইবার বুলিং দিন দিন বাড়ছে।
- কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির কারনে জব সেক্টরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ আগের তুলনায় বেশি জব হারাচ্ছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে দিয়েছে তবে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধার দিক গুলো অনেক রয়েছে। আমরা যেহেতু ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিনির্ভর এক বিশ্বে বসবাস করছি সে ক্ষেত্রে অসুবিধার দিক গুলো খেয়াল রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
📌 আরো পড়ুন 👇
ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের মতামত
ডিজিটাল প্রযুক্তি কি আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করলাম ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু। বর্তমানে দিন দিন প্রযুক্তির ধরণ আপডেট হচ্ছে আগামীতে হয়ত ডিজিটাল প্রযুক্তি কে ও ছাপিয়ে নতুন কোনো প্রযুক্তি আরো কম সময়ে কাজ করতে সক্ষম হবে। আর্টিকেল টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।