ভিডিও এডিটিং করে আয় করার উপায় – বর্তমান সময়ে ভিডিও এডিটিং এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিডিও এডিটিং এর উপরে মার্কেটপ্লেসে প্রচুর পরিমানে কাজের চাহিদা তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে যে কোনো চটকদার বিজ্ঞাপণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ভিডিও এডিটর।
আগামী দিন গুলোতে ভিডিও এডিটিং এর চাহিদা থাকবে সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তাদের ভিডিও গুলো এডিট করার জন্য ভিডিও এডিটর নিয়োগ দিয়ে থাকে। অতিতে ভিডিও কন্টেন্ট অনেক কম ছিল তবে বর্তমানে সকল ক্ষেত্রে ভিডিও কন্টেন্ট সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে বিয়ের ভিডিও এডিটিং সকল ক্ষেত্রে একজন ভিডিও এডিটর এর প্রয়োজন পরে। অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো একটি দক্ষতা হলো ভিডিও এডিটিং। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো কিভাবে ভিডিও এডিটিং করে টাকা আয় করতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কিভাবে আপনি একজন প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটর হবেন।
ভিডিও এডিটিং কি
ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পূর্বে জানা প্রয়োজন ভিডিও এডিটিং কি এ সম্পর্কে। সাধারণ কথায় বলে – ভিডিও শ্যুট করার সময় কয়েক সেকেন্ড এর শ্যুট করা হয়। ভিডিও ক্লিপ গুলো কে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সাজিয়ে সেখানে এনিমেশন, টেক্সট, ইফেক্টস ও কালার গ্রেডিং এর মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ ভিডিও তৈরি করা কে মূলত ভিডিও এডিটিং বলা হয়।
আমরা যখন কোনো ভিডিও ধারণ করি তখন সেখানে অতিরিক্ত অংশ থাকে। কালার ঠিক ভাবে থাকে না। এনিমেশন যুক্ত করার মাধ্যমে ভিডিও গুলোকে আরো বেশি সুন্দর ও মার্জিত করা হয়। “র” ফুটেজ গুলো কে সঠিক ভাবে ভিডিও সম্পাদনার কাজ কে ভিডিও এডিটিং বলে।
ভিডিও এডিটিং এর জন্য কোন ২টি সফটওয়্যার অবশ্য জরুরি
প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটিং করার জন্য প্রফেশনাল সফটওয়্যার প্রয়োজন। উইন্ডোজ ও ম্যাক এর জন্য প্রচুর পরিমানে ভিডিও এডিটিং এর সফটওয়্যার রয়েছে। তবে ভালো মানের ভিডিও এডিট করার জন্য আপনার দুটি সফটওয়্যার অবশ্যই প্রয়োজন হবে। এই দুটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি যে কোনো ধরণের ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন। সফটওয়্যার দুটি হলো –
- Adobe Premere Pro
- Adobe After effects
সাধারণত এডোবি প্রিমিয়ার প্রো দিয়ে মূল ভিডিও এডিটিং এর কাজ সম্পন্ন করা হয়। আর আফটার ইফেক্টস ব্যবহার করে ভিডিও এর কিছু কিছু অংশে এনিমেসন ও কী-ফ্রেম এর কাজ করা হয়।
ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখব
ভিডিও এডিটিং আপনি অনেক ভাবে শিখতে পারবেন। তবে যদি আপনি একদম বিগিনার লেভেল এর হয়ে থাকেন তাহলে সবার আগে আপনাকে সব টুলস এর কাজ শিখতে হবে। টুলস দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও তৈরি করতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনাকে বিভিন্ন ধরণের টিয়োটোরিয়াল ভিডিও দেখতে হবে। তবে একজন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হওয়ার জন্য আপনাকে যেসব বিষয় অনুযায়ী কাজ করতে হবে –
ক্রিয়েটিভ
ভিডিও এডিটিং চাইলেই আপনি শিখতে পারবেন তবে শুধু মাত্র ভিডিও এডিট করতে পারলেই হবে না ক্রিয়েটিভ চিন্তাধারার মাধ্যমে ভিডিও কে অন্য সব এডিটর এর চেয়ে সেরা তৈরি করতে হবে। একটি ভিডিও অনেক ভাবে সাজানো যায়। ভিডিও টি আপনি কিভাবে সাজাবেন এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা
ভিডিও এডিটিং এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো আপনি যে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কাজ করবেন সে সফটওয়্যার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখা। এ ক্ষেত্রে আপনি অন্যসব সফটওয়্যার বাদ দিয়ে শুধু প্রিমিয়ার প্রো শিখতে পারেন। কারণ আপনি যখন প্রফেশনাল মানের কাজ চাইবেন তখন আপনার ক্লায়েন্ট রা প্রিমিয়ার প্রো দিয়েই এডিট করতে বলবে।
এনিমেশন জানতে হবে
সাধারণত যে কোনো ভিডিও এর ক্ষেত্রে মান বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে বেশি নজড় কারে ভিডিও এর মধ্যে থাকা এনিমেশন। এনিমেশন শেখার জন্য আপনাকে আফটার ইফেক্টস সফটওয়্যার এর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ভালো ভাবে শিখতে হবে। এনিমেশন এর পাশাপাশি সাউন্ড ডিজাইন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভিডিও এর বিভিন্ন অংশে সাউন্ড যুক্ত করে ভিডিও এর আরো বেশি বৃদ্ধি করা হয়।
ভালো মানের ডিভাইস
ভিডিও এডিটিং এর জন্য আপনার ভালো মানের পিসি থাকতে হবে। সাধারণ মানের পিসি বা ল্যাপটপের মাধ্যমে আপনি ভালো ভাবে ভিডিও এডিট এর কাজ করতে পারবেন না। যদি আপনার ভালো মানের পিসি বা ল্যাপটপ ক্রয় করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে সাধারণ সফটওয়্যার ক্যাপকাট ইন্সটল করে সাধারণ মানের ভিডিও এডিটিং এর কাজ শিখতে পারেন। তবে এটা দিয়ে প্রফেশনাল মানের প্রোজেক্ট তৈরি করতে পারবেন না।
ধৈর্য থাকা
ভিডিও এডিটিং অনেক ধৈর্যের একটি কাজ। এখানে সামান্য ২ সেকেন্ড এর একটি এনিমেসন তৈরি করতে আপনাকে ১ ঘন্টা সময় ও লাগতে পারে। তাই আপনার যদি ধৈর্য কম থাকে এই পেশা একদম এই আপনার জন্য নয়।
আপডেট রাখা
ভিডিও এডিটিং এর স্টাইল দিন দিন পরিবর্তন হতে থাকে। কিছু বছর পূর্বেও সাধারণ কিছু ইফেক্ট ব্যবহার করে ভালো মানের ভিডিও তৈরি করা হতো কিন্তু সেগুলো এখন মোটেও মান সম্মত হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তাই প্রতিনিয়ত ট্রেন্ড অনুযায়ী নিজেকে আপডেট রাখতে হবে।
ভিডিও এডিটিং কোর্স
ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এর উপরে কোর্স করা। কোর্স এর মাধ্যমে আপনি দ্রুত সময়ের মধ্যে শিখতে পারবেন। আর কোর্স করার টাকা না থাকলে আপনি ইউটিউব ভিডিও দেখে শিখতে পারেন তবে এটাতে অনেক বেশি সময় লাগবে।
ভিডিও এডিটিং কমিউনিটি এবং মার্কেটপ্লেস

ভিডিও এডিটিং কমিউনিটি হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপ যেমন ফেসবুক গ্রুপ , টেলিগ্রাম গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ইত্যাদি। এ সকল গ্রুপে জয়েন হয়ে নিবেন। এতে আপনি যেকোন সমস্যার জন্য সিনিয়রদের থেকে সাহায্য পাবেন।
ভিডিও এডিটিং মার্কেটপ্লেস হচ্ছে Linkedin, Quora, Upwork ইত্যাদি। প্রতিদিন এসকল মার্কেটপ্লেসে ভিজিট করবেন। এবং অন্যরা কিভাবে কাজ করছে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে আপডেট তথ্য জানার জন্য ভিডিও এডিটিং কমিউনিটি এবং মার্কেটপ্লেসে একটিভ থাকতে হবে।
ভিডিও এডিটিং করে আয় করার উপায়
বর্তমান অনলাইনে যুগে ঘরে বসে ইনকাম করা অনেক সুযোগ রয়েছে। শুধু আপনাকে যে কোন একটি স্ক্রিল অথবা কাজ সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখবেন তা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এবার আলোচনা করব ভিডিও এডিটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে।
ভিডিও এডিটিং করে আপনি অনেক ভাবে আয় করতে পারেন। কিন্তু সব ভাবে আয় করার জন্য আপনাকে প্রফেসনাল ভাবে কাজ শিখতে হবে। যদি আপনার কাজ শেখা হয়ে যায় তাহলে নিচের দেয়া মাধ্যম গুলোর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন –
১. মার্কেটপ্লেস থেকে আয়
ভিডিও এডিটিং এর জন্য মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রচুর পরিমানে চাহিদা থাকে। যে কোনো মার্কেটপ্লেস যেমন – ফাইবার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি সাইটে আপনার ভিডিও এডিটিং এর উপরে গিগ তৈরি করতে হবে। এখান থেকে আপনি দেশ ও দেশের বাহিরের মানুষের জন্য ভিডিও এডিটিং করে আয় করতে পারবেন।
২. সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপণ তৈরি করে আয়
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ভিডিও বিজ্ঞাপণ। এ ক্ষেত্রে ভালো বিজ্ঞাপণ তৈরি করার জন্য অনেক এডিটর খুজে থাকেন। আপনি যদি আফটার ইফেক্টস থেকে মোশন গ্রাফিক্স এর কাজ ভালো ভাবে শিখতে পারেন তাহলে কয়েক মিনিট এর ভিডিও এডস তৈরি করে আয় করতে পারবেন।
৩. বিয়ের ভিডিও এডিটিং
বর্তমান সময়ে অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন একটি কাজ হলো বিয়ের ভিডিও এডিটিং। আপনি যদি বিয়ের ভিডিও গুলো ভালো ভাবে এডিট করতে পারেন তাহলে অনেক টাকা এখান থেকে আয় করতে পারবেন।
৪. ইউটিউব ভিডিও এডিটিং

বর্তমানে ইউটিউবার এর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যত বেশি ইউটিউবার তৈরি হচ্ছে ততো বেশি চাহিদা তৈরি হচ্ছে ভিডিও এডিটর। সাধারণত ইউটিউবার রা তাদের ভিডিও এডিট করার জন্য ভিডিও এডিটর নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আপনি চাইলে ইউটিউবার দের ভিডিও এডিটিং করে আয় করতে পারবেন।
৫. ফুল-টাইম চাকরির সুযোগ
ভিডিও এডিটিং করে আয় করার সবচেয়ে ভালো একটি উপায় হচ্ছে ফুলটাইম চাকরির সুযোগ। কেননা মার্কেটপ্লে যে কখনো আপনি কাজ পাবেন কখনো পাবেন না। অন্যদিকে আপনি যদি কোন ইন্ডাস্ট্রির ভিডিও এডিটর হিসেবে চাকরি করেন, সেখানে আপনি সবসময় আয় করতে পারবেন।
আপনি যদি একদম প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও এডিটিং করতে পারেন এবং পাশাপাশি আপনার যদি পূর্বের কিছু অভিজ্ঞতা থাকে। তাহলে খুব সহজেই বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। কেননা বাংলাদেশে এমন অনেক ইন্ডাস্ট্রি আছে যারা ভালো মানের ভিডিও এডিটর খুঁজে থাকে। এবং তারা স্কিল উপর নির্ভর করে আর চাকরি দিয়ে থাকে।
কম্পিউটারে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
কম্পিউটারে ভিডিও এডিট করার জন্য অনেক সফটওয়্যার রয়েছে। নিচে আমরা ম্যাক ও ইউন্ডোজের জন্য সেরা কয়েকটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর তালিকা দিয়ে দিলাম –
উইন্ডোজ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
- Adobe Premiere Pro
- Cyberlink PowerDirector
- Camtasia
- Final Cut Pro
- DaVinci Resolve
- Filmora
- Capcut
- Hitfilm Express
ম্যাক ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
- Final Cut pro X
- iMovie
- Adobe Premiere Pro
- Adobe Premiere Rush
- Blender
- Lightworks
- Shotcut
মোবাইলে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
- CapCut
- Inshot
- KineMaster
- Filmora
- PowerDirector
- VivaVideo
ভিডিও এডিটিং এর ভবিষ্যৎ
বর্তমান সময়টা আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ। প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন কে আরো বেশি সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারনেটের শুরুর দিকে ব্লগ কন্টেন্ট মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল তবে প্রযুক্তির বিকাস এর ফলে এখন মানুষ ভিডিও কন্টেন্ট কে বিনোদন এর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে।
দিন দিন ভিডিও কন্টেন্ট এর মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন আপনার আশে পাশেই প্রচুর পরিমানে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছে। ভিডিও এডিটিং এর ভবিষ্যত বেশ ভালো। যদি আপনি ভিডিও এডিটিং ভালো ভাবে শিখতে পারেন তাহলে এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন।
ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে আমাদের মতামত
ভিডিও এডিটিং করে আয় করার উপায় আর্টিকেলে আমরা কিভাবে আপনি ভিডিও এডিট করে ইনকাম করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরলাম। তবে আপনি যে মার্কেটপ্লেসেই কাজ করেন না কেন, কাজ করার আগে এই মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নেবেন। যেমন তারা কিভাবে পেমেন্ট করে, বর্তমানে নতুন কাজ দিচ্ছে কিনা বা নতুনদের কাজ দিচ্ছে কিনা ইত্যাদি।
ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা দ্রুত উত্তর দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ