তথ্য হলো যে কোনো ধরনের জ্ঞান, উপাত্ত বা বিশদ যা একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ বা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন ফর্মে থাকতে পারে, যেমন সংখ্যারূপে, লিখিত বা মৌখিক রূপে, ছবি, অডিও বা ভিডিও আকারে। তথ্য হলো এমন উপাত্ত যা মানুষের বা যন্ত্রের মাধ্যমে সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিশ্লেষণ বা বিতরণ করা হয়। তথ্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ ও ব্যবহার করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, গবেষণা পরিচালিত হয় এবং জ্ঞান সৃষ্টি করা হয়।
তাছাড়া তথ্যের রয়েছে বিভিন্ন ধরণ, এই আর্টিকেলটিতে আমরা আরো ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করবো তথ্য কাকে বলে, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে তথ্যের সংজ্ঞা, তথ্য কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি। সবশেষে জানাবো তথ্য সংক্রান্ত বিষয়কে ঘিরে মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
তথ্য কাকে বলে

অক্সফোর্ড ইংরেজি ডিকশনারি অনুযায়ী, তথ্য হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যোগাযোগিত জ্ঞান। এই জ্ঞানটি একটি নির্দিষ্ট বার্তা প্রকাশ করার জন্য তৈরি হয় এবং এটি নির্দিষ্ট শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়।
Claude Shannon (শ্যানন) তথ্যকে “কমিউনিকেশন” বা যোগাযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করেছেন। শ্যাননের মতে, তথ্য হলো এমন একটি বার্তা, যা কমিউনিকেশনের মাধ্যমে প্রেরিত হয় এবং এটি অনিশ্চয়তা হ্রাস করে।
অন্যদিকে, Gregory Bateson (গ্রেগরি বেটসন) বলেন, “তথ্য হলো এমন কিছু যা একটি পার্থক্য তৈরি করে।” এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে জ্ঞান বা উপাত্তের পার্থক্যকে নির্দেশ করে।
ড্যাভেনপোর্ট এবং প্রুসাক বলেন, “তথ্য হলো ডেটা সেটাই যেটা অর্থবহ, প্রাসঙ্গিক ও উদ্দেশ্যসম্মত রূপে প্রক্রিয়াকৃত।” তাদের মতে, ডেটা একটি কাঁচা উপাদান, আর তথ্য হলো সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে একটি অর্থবহ ফর্মে রূপান্তরিত করা।
তথ্য কত প্রকার ও কি কি
তথ্য কি সেটা জানার পর তথ্য কত ধরণের হতে পারে সেটাও জানতে হবে। তথ্যের অনেক গুলো প্রকারভেদ রয়েছে যা বিভিন্ন ভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। তথ্যকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যেতে পারে।
তথ্য সাধারনত পাঁচ প্রকার। যথা:
- উৎসভিত্তিক তথ্য
- প্রকৃতিভিত্তিক তথ্য
- সময়ভিত্তিক তথ্য
- প্রক্রিয়াকরণের ধরণভিত্তিক তথ্য
- ব্যবহারের উদ্দেশ্যভিত্তিক তথ্য
নিম্নে এসকল তথ্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো:
১। উৎসভিত্তিক তথ্য

কোন নির্দিষ্ট উৎস বা সোর্স থেকে সংগ্রহ করা তথ্যকে উৎসভিত্তিক তথ্য বলা হয়। উৎসভিত্তিক তথ্য ২ প্রকার। যথা:
প্রাথমিক তথ্য (Primary Data)
প্রাথমিক তথ্য হলো সেই উপাত্ত যা সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ঘটনার পর্যবেক্ষণ, গবেষণা বা জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। এটি মূল উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য যা অন্য কোনো মাধ্যমে আগে ব্যবহৃত হয়নি। উদাহরণ: জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত মতামত, সরাসরি পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষার ফলাফল।
গৌণ তথ্য (Secondary Data)
গৌণ তথ্য হলো এমন তথ্য যা প্রাথমিক উৎস থেকে সংগৃহীত হয়ে অন্যের দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত এবং উপস্থাপিত হয়। এই তথ্য গুলো সাধারণত বিভিন্ন প্রতিবেদন, গবেষণা পত্র, প্রকাশিত বই বা ডাটাবেস থেকে নেওয়া হয়। উদাহরণ: বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য, প্রকাশিত গবেষণা পত্র, সরকারি তথ্য ভাণ্ডার।
২। প্রকৃতিভিত্তিক তথ্য

যে তথ্য আমাদের চারপাশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক উপাদান, জীবজন্তু ইত্যাদি পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে, তাকে প্রকৃতিভিত্তিক তথ্য বলে। এই তথ্যগুলো সাধারণত প্রকৃতিবিদরা করে থাকেন।
প্রকৃতিভিত্তিক তথ্য সাধারণত ২ প্রকার। যথা:
গাণিতিক তথ্য (Quantitative Data)
গাণিতিক তথ্য হলো এমন তথ্য যা সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটি পরিমাপযোগ্য এবং নির্দিষ্ট সংখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এই ধরনের তথ্য সাধারণত সংখ্যারূপে থাকে এবং পরিসংখ্যান বা বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: জনসংখ্যার সংখ্যা, বিক্রয়ের পরিসংখ্যান, আয়তনের হিসাব।
গুণগত তথ্য (Qualitative Data)
গুণগত তথ্য হলো এমন তথ্য যা গুণগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয় এবং তা সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটি সাধারণত বিষয়ভিত্তিক বা বর্ণনামূলক হয়। উদাহরণ: কোনো পণ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্য, গ্রাহকের মতামত, আচরণগত পর্যবেক্ষণ।
৩। সময়ভিত্তিক তথ্য

যে তথ্যই কি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগঠিত হয়, তথ্য বলে। এই তথ্য ব্যবসা, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
সময়ভিত্তিক তথ্য দুই প্রকার, যথা:
স্থায়ী তথ্য (Static Data)
স্থায়ী তথ্য হলো এমন তথ্য যা সময়ের সাথে সাথে খুব কম পরিবর্তিত হয়। একবার সংগৃহীত হওয়ার পর তা দীর্ঘ সময়ের জন্য অপরিবর্তিত থাকে। উদাহরণ: কোনো স্থাপনার আয়তন বা গঠন, জনমিতির বৈশিষ্ট্য।
গতিশীল তথ্য (Dynamic Data)
গতিশীল তথ্য হলো এমন তথ্য যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। এটি পরিবর্তনশীল এবং সময় অনুযায়ী আপডেট করতে হয়। উদাহরণ: স্টক মার্কেটের মূল্য, আবহাওয়ার তথ্য, ট্রাফিক পরিস্থিতি।
৪। প্রক্রিয়াকরণের ধরণভিত্তিক তথ্য
সাধারণত প্রক্রিয়াকরণের ধরণভিত্তিক তথ্যকে ডেটা টাইপ (Data Type) বলা হয়। প্রক্রিয়াকরণের ধরণভিত্তিক তথ্য দুই প্রকার, যথা:
কাঁচা তথ্য (Raw Data)
Raw Data হলো প্রাথমিক অবস্থায় সংগ্রহকৃত তথ্য, যা কোনো প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ বা সংগঠিত হয়নি। উদাহরণ: জরিপের অপরিশোধিত ফলাফল, গণনার কাঁচা উপাত্ত।
প্রক্রিয়াজাত তথ্য (Processed Data)
প্রক্রিয়াজাত তথ্য হলো এমন তথ্য যা বিশ্লেষণ, পরিমার্জনা বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ফর্মে রূপান্তরিত হয়েছে। উদাহরণ: বিশ্লেষণ করা পরিসংখ্যান, সংকলিত গবেষণার ফলাফল।
৫। ব্যবহারের উদ্দেশ্যভিত্তিক তথ্য

যে তথ্য কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হয়, তাকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যভিত্তিক তথ্য বলে। এই তথ্য গণনা বা ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হয়।
এই তথ্য দুই ভাগে বিভক্ত। যথা:
প্রশাসনিক তথ্য (Administrative Data)
এটি মূলত প্রশাসনিক বা সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক। উদাহরণ: জনসংখ্যার তথ্য, রাজস্বের হিসাব।
গবেষণাধর্মী তথ্য (Research Data)
এই তথ্য সাধারণত গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য সংগ্রহ করা হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট গবেষণা প্রশ্নের উত্তর দিতে বা কোনো তত্ত্বের প্রমাণ দিতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: গবেষণার ফলাফল, পরীক্ষার উপাত্ত।
তথ্য ও উপাত্তের মধ্যে পার্থক্য
তথ্য এবং উপাত্ত একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে তাদের মূল পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
|
উপাত্ত (Data) |
তথ্য (Information) |
| ১. উপাত্ত হলো কাঁচা, অপরিশোধিত বা সংগৃহীত তথ্য যা এখনো বিশ্লেষণ করা হয়নি। | ১. তথ্য হলো প্রক্রিয়াজাত, বিশ্লেষিত এবং অর্থবহ উপাত্ত যা নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ অনুযায়ী অর্থপূর্ণ হয়। |
| ২. এটি সংখ্যাসূচক বা গুণগত হয় এবং পরিসংখ্যান বা বর্ণনা হিসেবে সংগৃহীত হয়। | ২. তথ্য হলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি অর্থবহ উপাত্ত, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক। |
| ৩. উপাত্ত সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট আকারে অর্থবোধক নয় এবং এটি প্রাথমিক পর্যায়ের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। | ৩. তথ্যের মাধ্যমে আমরা উপাত্তের বিশ্লেষণ বা প্রসঙ্গ বুঝতে পারি এবং এর দ্বারা অর্থবহ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। |
| ৪. উপাত্ত সাধারণত অপরিবর্তিত এবং সরাসরি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। | ৪. তথ্য হলো প্রক্রিয়াজাতকরণের পরে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত এবং সেটি পরিষ্কার ও সহজবোধ্য হয়। |
| ৫. উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় এবং পরে সেটিকে বিশ্লেষণ বা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। | ৫. তথ্য প্রক্রিয়াকৃত উপাত্ত যা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করা যায়। |
| ৬. উদাহরণ: পরীক্ষার স্কোর, বিক্রয়ের সংখ্যা, জরিপের অপরিশোধিত ফলাফল। | ৬. উদাহরণ: পরীক্ষার গড় ফলাফল, বিক্রয়ের প্রবণতা, জরিপের বিশ্লেষিত প্রতিবেদন। |
📌 আরো পড়ুন 👇
তথ্য সম্পর্কে আমাদের মতামত
আর্টিকেলটিতে আমরা জেনেছি তথ্য কাকে বলে, তথ্য কত প্রকার ও কি কি, উপাত্তের সাথে তথ্যের পার্থক্যটা মূলত সে বিষয়ে। তবে জেনে রাখা ভালো যে, তথ্য বর্তমান যুগের শক্তি এবং আগামী দিনে এর গুরুত্ব আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বড় ডেটা, এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো প্রযুক্তি তথ্যের সঠিক ব্যবহার এবং ভবিষ্যতের উন্নতির পথে বড় ভূমিকা পালন করবে। সঠিক তথ্যের সুরক্ষা এবং ব্যবহার আমাদের সমাজের উন্নয়নে ও ভবিষ্যৎ সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
আর্টিকেল টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।