প্রজেক্টের কি – আপনি কি কখনো সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছেন? অথবা আপনি কোনো কোনো ক্লাস রুমে প্রজেক্টর দিয়ে ক্লাস করাতে দেখেছেন? নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে আপনি যে কোনো একটি দেখেছেন। আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন এসেছে এত বড় একটা স্ক্রিনে কিভাবে চিত্র গুলো কে প্রদশর্ন করা হয়?
আপনি হয়ত এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুজছেন তাই আর কোনো ওয়েবসাইট খোজা বাদ দিয়ে পড়ে ফেলুন আমাদের আজকের আর্টিকেল টি। আমাদের আজকেত আর্টিকেলে আমরা প্রজেক্টর এর সকল কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
প্রজেক্টর কি
প্রজেক্টর সম্পর্কে বুঝার পূর্বে আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে প্রজেক্টর জিনিস টা আসলে কি। প্রজেক্টর হলো এক ধরণের ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল যন্ত্র। যার মাধ্যমে কোনো চিত্র, ডেটা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি বড় আকারে ডিসপ্লে করা যায়। সাধারণ কোনো মনিটরে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ কে দেখানো সম্ভব হয় না।
যখন অনেক গুলো মানুষ কে ডিসপ্লে আকারে কোনো ভিডিও বা তথ্য প্রদর্শন করতে হয় তখন ব্যবহার করা হয় প্রজেক্টর। প্রজেক্টর সাধারণত আউটপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। এটি সোর্স থেকে ব্লু রে প্রিন্ট সংগ্রহ করে চিত্র ধারণ করে এবং প্রজেকসন এর মাধ্যমে স্ক্রিনে, পর্দায় বা দেয়ালে প্রতিভিম্ব তৈরি করে দেয়।
প্রজেক্টর যে কোনো ধরণের ভিডিও, স্লাইড প্রজেন্টেসন ইত্যাদি প্রদর্শন করতে সক্ষম। সাধারণত যেটার উপরে প্রজেকসন করা হয় সেটা হালকা রঙের হয়ে থাকে। আপনি আপনার বাসার দেয়াল কিংবা পর্দার সাথেও প্রজেক্টর দিয়ে বড় স্ক্রিন তৈরি করে যে কোনো কিছু উপভোগ করতে পারবেন।
প্রজেক্টর কিভাবে কাজ করে
প্রজেক্টর কিভাবে কাজ করে এটা বুঝতে হলে আমাদের সবার আগে প্রজেক্টর এর মেকানিজম বুঝতে হবে। প্রজেক্টর তাকে দেয়া সোর্স থেকে ইমেজ বা ভিডিও ক্যাপচার করে পর্যায়ক্রমে সেগুলো কে প্রদর্শন করে কয়েকটি ধাপ এর মাধ্যমে –
১. ইনপুট সিগনাল
ভিডিও বা ইমেজ এর সোর্স কম্পিউটার/ডিভিডি বা যে কোনো কিছুই হতে পারে। সোর্স থেকে প্রথমে HDMI, VGA বা অন্য কোনো ক্যাবল এর মাধ্যমে কানেক্টেড করে।
২. ইমেজ প্রসেসিং
কানেক্টেড থাকা ডিভাইস হতে ভিডিও কে নিজস্ব পদ্ধতিতে কনভার্ট করে, কালার কারেকসন করে, সঠিক মাপের একটি রেজুলেসন তৈরি করে।
৩. লাইট সোর্স
প্রজেক্টর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো লাইট। লাইট ছাড়া প্রতিভিম্ব তৈরি হবে না। প্রজেক্টরে শক্তিশালী লাইট, এলএইডি, বা লেজার ব্যবহার করা হয়। যেটা দেয়াল কিংবা পর্দায় চিত্র ফুটিয়ে তুলে।
৪. ছবি তৈরি
ছবি তৈরি করার ক্ষেত্রে ৩ টি মেকানিজম কাজ করে। একটি হলো – DLP ( ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং) অন্যটি হলো – LCD ( লিকুইড স্ক্রিস্টাল প্রদর্শন) অন্যটি হলো – LCoS ( লিকুইড ক্রিস্টাল অন সিলিকন)।
এগুলো ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করে প্রজেক্টর এর প্রকারভেদ অনুযায়ী।
৫. প্রজেকসন
ছবি তৈরি করা হয়ে গেলে সেটা কে প্রদর্শন করার জন্য একটি লেন্স এর মধ্যে প্রজেকসন এর জন্য চলে যায় এবং স্ক্রিনে অথবা দেয়ালে চিত্র ফুটিয়ে তুলে।
৬. এডজাস্টমেন্ট
আপনার দেয়ালে বা স্কিনের সাইজ অনুযায়ী প্রজেকসন কে কন্ট্রোল করার জন্য কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহার করা যায়। এর ফলে সঠিল মাপের ভিডিও চিত্র দেয়ালের উপর প্রদর্শন করা সম্ভব হয়। সঠিক ভাবে এডজাস্টমেন্ট করা হয়ে গেলে আপনার ভিডিও চিত্র বড় পর্দায় দেখার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
প্রজেক্টরের প্রকারভেদ
প্রজেক্টর অনেক ধরণের হয়ে থাকে এটা নির্ভর করে কোন ধরণের প্রযুক্তি এটাতে ব্যবহার করা হয়েছে সেটার উপর। এখানে আমরা কয়েক ধরণের প্রজেক্টর এর নাম দিলাম –
- LCD – লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে : এ ধরণের প্রজেক্টর গুলো ৩ টি LCD প্যানেল নিয়ে ইমেজ তৈরি করে প্রদর্শন করে।
- DLP – ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং: ৩ টি কালার নিয়ে এটি কাজ করে যথাক্রমে – লাল, সবুজ ও নীল। এ ক্ষেত্রে সিংগেল চিপ ও থ্রি চিপ এর ব্যবধান রয়েছে।
- LED – লাইট এমিটিং ডিওড : এটার ক্ষেত্রে এলইডি কে লাইট সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ধরণের প্রজেক্টর ব্যবহার করতে অতিরিক্ত আলোর উৎস প্রয়োজন পরে না।
- লেজার প্রজেক্টর : লাইট সোর্স হিসেবে লেজার ব্যবহার করা হয়, স্ক্রিনে অতিরিক্ত আলোর প্রয়োজন এর ক্ষেত্রে লেজার প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়।
- LCoS – লিকুইড ক্রিস্টাল অন সিলিকন : এই ধরণের প্রজেক্টর গুলোতে LCD ও DLP দুটো বিদ্যমান থাকায় অনেক ভালো মানের ইমেজ দেখাতে সক্ষম হয়।
- CRT – ক্যাথড র্যে টিউব : এটি একটি পুরাতন প্রযুক্তির প্রজেক্টর। যা ৩ টি কালারে প্রদর্শন করা যায়।
- পকেট প্রজেক্টর : এ ধরণের প্রজেক্টর গুলো সাইনে অনেক ছট হওয়ায় পকেটে নিয়ে যে কোনক স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব।
- আল্ট্রা শর্ট থ্রো প্রজেক্টর : অনেক বড় ইমেজ প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে এই ধরণের প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়।
- হোম থিয়েটার প্রজেক্টর: সাধারণত বাড়িতে সিনেমা হল এর স্বাদ নিতে এই ধরণের প্রজেক্টর গুলো ব্যবহার করা হয়।
- ইন্ট্রেক্টিভ প্রজেক্টর : এ ধরনের প্রজেক্টর গুলো সাধারণত ক্লাস রুমে বেশি ব্যবহার করা হয়। কারন এটি ইমেজ তৈরির পাশাপাশি পেন টাচ সাপোর্ট করে।
প্রজেক্টর এর সুবিধা
প্রজেক্টর বর্তমানে নানান কাজে অনেক বেশি পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রজেক্টরের অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে আমরা কয়েকটি সুবিধার দিক উল্লেখ্য করে দিচ্ছি –
১. বড় পর্দায় দেখা যায়
ধরুন – আপনার সিনেমা হলে যেতে ইচ্ছা করছে না কিন্তু সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখার ইচ্ছা হয়েছে। যদি আপনার কাছে প্রজেক্টর থাকে তাহলে আপনি বাড়ির দেয়াল কে সিনেমার পর্দা বানিয়ে শুয়ে শুয়ে সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন।
২. দাম কম
চিন্তা করুন তো একটি প্রজেক্টর এর সাইজের টিভি বা মনিটর কিনতে আপনাকে কত টাকা গুনতে হবে? কিন্তু তার চেয়েও অনেক কম মূল্যে আপনি ফ্লাট স্ক্রিন এর জন্য প্রজেক্টর কিনতে পারবেন।
৩. অল্প জায়গায় রাখা যায়
প্রজেক্টর ব্যবহারের জন্য অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন পরে না। আপনি যে কোনো স্থানে এটা কে সেটাপ করে নিতে পারবেন।
৪. সবখানে নেয়া যায়
আপনার একটা বড় মনিটর থাকলে সেটা আপনি ক্যারি করে সবখানে নিয়ে যেতে পারবেন না কিন্তু প্রজেক্টর আপনি ব্যাগে করে সব খানে নিয়ে যেতে পারবেন।
৫. যে কোনো ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়
প্রজেক্টর ব্যবহার করার জন্য আলাদা কোনো ডিভাইস এর প্রয়োজন হয়না। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডিভিডি, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রজেক্টর ব্যবহার করা যায়।
প্রজেক্টর এর অসুবিধা
প্রজেক্টরের সুবিধার দিক যেহেতু তুলে ধরেছি অসুবিধার দিক গুলো এবার তুলে ধরি। ক্রয়ের পূর্বেই এটার উপর আপনাকে নজড় দিতে হবে। প্রজেক্টরের অসুবিধার দিক গুলো হলো –
- প্রজেক্টর নিয়মিত পরিস্কার রাখা প্রয়োজন লেন্সে ময়লা পরে নস্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আলাদা কোনো সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় আপনাকে আউটপুট সাউন্ড সিস্টেম যুক্ত করতে হবে।
- অতিরিক্ত ইউনিট পাওয়ার ব্যবহারে দাম বৃদ্ধি ও ইলেক্টেসিটি খরচ বাড়বে।
📌 আরো পড়ুন 👇
প্রজেক্টর সম্পর্কে আমাদের মতামত
প্রজেক্টর কি আর্টিকেলে আমরা প্রজেক্টর সব কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আপনি যদি ভাবেন প্রজেক্টর কিনবেন তাহলে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী টেকনোলজি যুক্ত প্রজেক্টর ক্রয় করতে হবে।
যেহেতু সব ধরণের প্রজেক্টর দিয়ে সব ধরণের কাজ করা সম্ভব নয় তাই ক্রয়ের পূর্বেই ভালো করে জেনে শুনে ক্রয় করতে হবে। যদি প্রজেক্টর নিয়ে আপনাদের আরো কোনো জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আমাদের কে মন্তব্য করে জানাতে পারেন। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ