আপনি কি ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করতে চান? তাহলে আপনি একদম সঠিক ওয়েবসাইটে এসেছেন। আজ আমরা ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করার সকল নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
কথিত একটা কথা আছে যে, আপনি যেখানেই তাকাবেন সেখানেই কোনো না কোনো ব্যবসার উপস্থিতি আছে। কথাটি যেমন অফলাইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমন অনলাইনেও। একটা সময় ঘরে বসে ব্যবসা করাটা হাস্যরসাত্মক হলেও বর্তমান সময়ে এমন লক্ষ লক্ষ উদাহরণ আশেপাশে দেখা যাবে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করার।
প্রযুক্তিগত পেক্ষাপট পালটে গেছে, ব্যবসা করতে প্রয়োজন হয় না মোটা অংকের পুঁজিও। বাইরের পাশাপাশি এখন ঘরে বসেও ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ আকৃতির ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। এবারের আর্টিকেলে জানাবো এমনই কিছু ব্যবসা সম্পর্কে যা ঘরে বসেই পরিচালনা করা যাবে।
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পদক্ষেপ
যে কোন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সেটার সঠিকভাবে স্ট্যাটেজি অনুসরণ করা জরুরি। ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। প্রথম থেকেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাকে নির্ধারণ করে এগোতে হবে।
অনলাইনে ঘরে বসে হোক কিংবা অন্য কোন স্থানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সবার পূর্বে দরকার একটি স্বচ্ছ ও সঠিক পরিকল্পনা। যেখানে ব্যবসার পণ্য থেকে শুরু করে, ভোক্তার হাতে পণ্যটি সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার পর্যন্ত রোড ম্যাপ তৈরি করতে হয়।
আর আপনি যখন ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করার কথা ভাববেন সেক্ষেত্রে পূর্ব থেকেই সবকিছু নির্ধারণ করা জরুরী। আপনি কোথা থেকে পণ্য সোর্সিং করবেন, পণ্যের প্রাইজিং, প্যাকেজিং পদ্ধতি, এবং ডেলিভেরি প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করতে হবে।
অতঃপর মার্কেটিং এর বিষয়তে সম্পূর্ণ ফোকাস করতে হবে। কেননা, মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেই সম্ভাব্য ক্রেতারা আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানবে এবং ঘরে বসেই অনলাইন ব্যবসা করা সহজ হবে।
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করার নিয়ম
ব্যবসা করার যেমন বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়। তেমনি অনলাইনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। নিম্নে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করার নিয়ম দেওয়া হলো:
- হতে পারে আপনি উক্ত পণ্যের নিজেই উৎপাদক কিংবা অন্য কোথাও থেকে প্রোডাক্ট সোর্সিং করবেন। সেটা যেটাই হোক না কেনো, প্রোডাক্ট আপনার হাতে আসার পর সেটার প্রাইজ নির্ধারণ, মোড়কিকরণ করতে হবে।
- প্রোডাক্টের মার্কেটিং কার্যক্রম চালাতে হবে। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনলাইন ভিত্তিক প্রোডাক্টের মার্কেটিং সেক্টর অনলাইনে হয়ে থাকে এক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং বেশ কার্যকর।
- কাস্টমারের কাছ থেকে অর্ডার প্রাপ্তির পর ডেলিভারি পার্টনারের দ্বারা ক্রেতার নিকট পণ্য পাঠাতে হবে। ডেলিভারি ম্যান আপনার লোকেশনে এসে পণ্য Pick করে ক্রেতার কাছে পৌছে দিবে। এই কাজে বর্তমানে ভালো কাজ করছে Pathao, Redex, SteadFast ইত্যাদি।
- ডেলিভারি ম্যান কে তার হাতে পণ্য দিয়ে ক্যাশ অন ডেলিভারিতে টাকা নিয়ে আসবে। অতঃপর আপনি ডেলিভারি কোম্পানির কাছ থেকে উক্ত টাকা গ্রহণ করবেন। এভাবেই মূলত অনলাইনে ব্যবসা পরিচালিত হয়।
উক্ত নিয়ম গুলো মেনে চললে আশা করছি আপনি ব্যবসা করে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করার ৫টি আইডিয়া
এই পর্যায়ে জেনে নেই পাঁচটি অসাধারণ অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া যেগুলো ঘরে বসে করতে পারবেন। পাশাপাশি জানাবো সার্ভিস ভিত্তিক ব্যবসা যা করতে প্রয়োজন নেই কোনো ফিজিক্যাল প্রোডাক্টও।
১. ঘরের তৈরি পণ্য বিক্রি
যখনই ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করার চিন্তা করবেন তখন সবার আগে ঘরে তৈরি পণ্যের ব্যবসা করার কথাই মাথায় আসার কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘ঘরে তৈরি পণ্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?‘ এটি যেকোনো ধরনের পণ্য হতে পারে, তবে বিশেষভাবে খাদ্য এবং হাতের কাজের পণ্যগুলো অন্যতম। বিক্রির জন্য ঘরে তৈরি করা যায় এমন কিছু পণ্য হলো:
ক্যাটাগরি | পণ্য গুলোর নাম |
হাতের কাজের পোশাক | নকশা করা শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তা ইত্যাদি |
গহনা | বিডস, পুঁতি বা মেটালের গহনা |
হাতের তৈরি সাবান | বিভিন্ন সুগন্ধি ও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাবান তৈরি |
মোমবাতি | সুগন্ধি মোমবাতি, রঙিন মোমবাতি ইত্যাদি |
বেকারি পণ্য | কেক, কুকিজ, ব্রেড, পেস্ট্রি ইত্যাদি |
হ্যান্ড ক্রাফট আইটেম | বিভিন্ন ধরনের ক্রাফট আইটেম যেমন ডেকোরেটিভ আইটেম, গিফট আইটেম ইত্যাদি |
হোম মেড বিউটি প্রোডাক্ট | ফেস মাস্ক, স্ক্রাব, লোশন ইত্যাদি |
আচার ও মশলা | ঘরে তৈরি আচার, মশলা, চাটনি ইত্যাদি |
ব্যাগ ও পার্স | কাপড় বা লেদার দিয়ে তৈরি ব্যাগ, পার্স ইত্যাদি |
শিশুদের খেলনা | কাপড়, কাঠ বা অন্য কোন উপাদান দিয়ে তৈরি খেলনা |
কিভাবে পণ্যগুলো তৈরি করতে হয় সেগুলোর প্রশিক্ষণ নিন এবং সেগুলো ঘরে বসে তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করুন।
২. ড্রপশিপিং এর ব্যবসা
ড্রপশিপিং হলো একটি ই-কমার্স ব্যবসায়ের ভিন্ন এক মডেল যেখানে ব্যবসায়ী কোনো পণ্য স্টক করেন না বা নিজের কাছে রাখেন না। বরং, গ্রাহক যখন কোনো পণ্য অর্ডার করেন, তখন ব্যবসায়ী সেই অর্ডারটি সরাসরি তৃতীয় পক্ষের সরবরাহকারী বা প্রস্তুতকারকের কাছে পাঠিয়ে দেন, এবং তারা পণ্যটি সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়।
এই ব্যবসার সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো আপনাকে কোথাও যেতে হবে না প্রোডাক্ট সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম করতে হবে না আপনি ঘরে বসে শুধুমাত্র মধ্যস্থ ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করবেন। আপনার মূল কাজ হবে কাস্টমারদের কাছে অন্যের গুনগতমান উপস্থাপন করে উক্ত পণ্যটিকে ক্রয় উৎসাহী করে তুলতে হবে। যখনই পণ্য ক্রয় করবে আপনি ক্রেতা ও পণ্যের তথ্য ৩য় পক্ষের নিকট পৌছে দিবেন।
৩য় পক্ষে আপনার হয়ে, আপনার ব্যবসায়িক নাম ও পরিচয় বহন করে ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দিবে। আর আপনি ৩য় পক্ষের নিকট থেকে আপনার অতিরিক্ত আয়ের টাকা উত্তোলন করে নিবেন। বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু ড্রপশিপিং প্ল্যাটফর্ম হলো: SELF, Checkbox, BD shop ইত্যাদি।
৩. ইমপোর্ট করা পণ্য বিক্রি
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করার আরো একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে ইমপোর্ট করা পণ্য বিক্রি করা। এবার অনেকে ভাবতে পারে “ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট এর ব্যবসা যারা করে তারা কিভাবে ঘরে বসে সেগুলো করবে?”আসলে সঠিক স্ট্যাটিজি অনুসরণ করলে যে কোন কিছুই করা সম্ভব।
বর্তমানে এমন কিছু B2B প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে পুরো কাজটি খুব সহজ হয়ে যায়। এ ধরনের প্লাটফর্ম গুলো থেকে আপনি প্রোডাক্ট সোর্সিং থেকে শুরু করে শিপমেন্টের কাজও করে নিতে পারবেন। তারা আপনার থেকে পণ্যের অর্ডার নেবে, পণ্যটি ক্রয় করে তা বাংলাদেশে আপনার হাতে পৌঁছে দিবে। এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম এর নাম হলো:
- China Online BD
- Whole Sale Plus
- Moveon
প্রোডাক্টগুলো যখন আপনার হাতে চলে আসবে তখন এগুলোকে পুনরায় প্যাকেজিং করে আপনার কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেবেন ডেলিভেরি কোম্পানিগুলোর সাহায্যে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকেই এই মডেলটি অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রি-পেমেন্ট গ্রহণ করে চায়না থেকে পণ্য এনে দিচ্ছে কাস্টমারের কাছে।
৪. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ঘরে বসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা ইনকাম করার দারুন একটি উপায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল কোন পণ্য বিক্রি করে commission প্রাপ্ত হওয়া। উদাহরণস্বরূপ আপনি কোন একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা হলো কোম্পানির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের পণ্য বা সেবা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে বিক্রি করালেন। এর জন্য তারা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের কমিশন প্রদান করবে।
তবে এই কাজটি মোটেও একটিভ ইনকামের জন্য নয় বরং প্যাসিভ ইনকামের জন্য। কেননা এখানে আপনি একবার পরিশ্রমে আজীবন অব্দি প্রফিট পেতে থাকবেন। যদিও বর্তমানের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় amazon affiliate program কিন্তু এখানে কমিশনের মাত্রা খুবই কম।
এমন অনেক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে যেখানে কমিশন আপনি ১০ থেকে ১০০০ ডলার অব্দিও পেতে পারেন। এমন কিছু অ্যাফিলিয়েট প্ল্যাটফর্ম হলো:
- Shareasell
- Appsumo
- Impact
যদি প্রকৃতপক্ষেই ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করতে চান কিংবা প্যাসিভ ইনকামের ব্যবস্থা করতে চান তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর দিকেই ঝুঁকে যান।
৫. ওয়েবসাইট সেলিং
ওয়েবসাইট সেলিং হল অনেকটা রিয়েলি এস্টেট সেলিং ব্যবসার মত। এখানে আপনি একটি ওয়েবসাইট ক্রয় করবেন পরবর্তীতে ডিজিটাল মার্কেটিং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এসইও পাশাপাশি অ্যাড নেটওয়ার্ক নলেজ একত্রিত করে সেই ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবেন অতঃপর একটি নির্দিষ্ট টার্গেট সীমার মধ্যে পৌঁছে গেলে সে ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি করে দিবেন।
আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে প্রথমে আপনি একটি ওয়েবসাইট ক্রয় করবেন। এবার সেই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কনটেন্ট দেয়ার মাধ্যমে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করাবেন। গুগল এডসেন্স সহ বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইট অ্যাপ্রুভ করিয়ে যখন ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ভিজিটর আসবে কিংবা এডসেন্স থেকে ইনকাম হবে তখন ওয়েবসাইট থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে দিবেন।
সাধারণ একটি হিসেব অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট থেকে যত টাকা ইনকাম করা যায় সে টাকার সাথে ৩০ গুন করলে যে মূল্য আসে সেটি ওয়েবসাইটের মূল্য হয়।
📌 আরো পড়ুন 👇
- মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা
- পত্রিকায় লেখালেখি করে আয় করার উপায়
- কবিতা ও গল্প লিখে আয় করার উপায়
ওয়েবসাইট সেলিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে আপনার খুব বেশি টাকা ইনভেস্ট করতে হয় না। সম্পূর্ণ ব্যবসাটি ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করা যায়।
অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য কোনটি
অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্যের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্যাটাগরি রয়েছে, তবে নির্দিষ্ট পণ্যগুলোর জনপ্রিয়তা সময় এবং অঞ্চলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয়। একটি ছক দ্বারা পণ্য গুলো উপস্থাপন করছি।
ক্যাটাগরি | আইটেম |
ইলেকট্রনিক্স এবং গ্যাজেটস |
|
ফ্যাশন এবং অ্যাপারেল |
|
বিউটি এবং পার্সোনাল কেয়ার প্রোডাক্টস |
|
বই এবং স্টেশনারি |
|
আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কিত প্রশ্নউত্তর
ঘরে বসে অনলাইনে কি ব্যবসা করা যায়?
হ্যাঁ, ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করা যায়। ঘরোয়া তৈরি পণ্য অনলাইনে বিক্রি, ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং, ড্রপশিপিং,ওয়েবসাইট ফ্লিপিং ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্যবসার উদাহরণ।
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে আমাদের মতামত
ওভারল এই ছিলো ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে ব্যাসিক থেকে মিড রেঞ্জ ধারণা। ইনকামের অভাবনীয় সম্ভবনা গুলো অনুসরণ করে আপনিও ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা দাড় করে ফেলতে পারেন।
আর্টিকেলে উল্লেখ্যিত ৫টি আইডিয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক আইটেম যেকোনো একটি কিংবা একাধিক নিয়েও শুরু করা যায় অনলাইন ব্যবসার পথযাত্রা। আপনার জন্য শুভকামণা। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ